মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় অক্সফোর্ড একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে পাঁচজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে শিবালয় থানায় রুজু হয় (এফআইআর নং-৯) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০(সংশোধিত ২০২০) এর ১০/৩০ ধারা অনুসারে দায়ের করা হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে শিবালয় থানা পুলিশ মূল অভিযুক্ত শিক্ষক গোপাল চন্দ্র শীলকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে। মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ সুপার, মানিকগঞ্জের নির্দেশনায় থানা পুলিশ দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হলে শিবালয় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)এ.আর.এম আল-মামুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। জানা যায়, শিক্ষার্থীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল। তবে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ও পরিস্থিতি ঘোলাটে করার শঙ্কায় ওসি দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং সংশ্লিষ্ট ৮ জন শিক্ষার্থীকে (নেতৃত্বদানকারী) থানায় ডেকে তাদের মতামত নেন।
ওসির আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও কর্মসূচি আপাতত প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী হোসাইন রহমান আকাশ জানান,“আমরা চাই, মূল অভিযুক্তের বিচার হোক। কিন্তু আমাদের কর্মসূচি ভুলভাবে প্রচার করা হলে, এটি আসামির পক্ষ নেওয়ার অপপ্রচারে রূপ নেবে। তাই আপাতত আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি।”
শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিযুক্ত পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে মূল অপরাধী শুধু গোপাল চন্দ্র শীল । তবে অভিযুক্তদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন সিনিয়র শিক্ষক রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কোনো গুরুতর অভিযোগ আনেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ থাকলেও, সেটি অনিচ্ছাকৃত বলে মনে করছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের আরেকটি আশঙ্কা হলো, বহিষ্কৃত সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের ধারণা, তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে। তাই তারা প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছেন।
অভিযানের প্রথম দিন থেকেই শিবালয় থানার ওসি মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে থানার মোবাইল টিম মোতায়েন করা হয়, যাতে বহিরাগত কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।
এ বিষয়ে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.আর.এম আল-মামুন বলেন“আমরা চাই নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হোক, আবার অপরাধীও যাতে কোনোভাবেই ছাড় না পায়। প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে, এবং তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হবে। পুলিশ সুপার মহোদয়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি।”
বর্তমানে থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং প্রশাসন দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। স্থানীয়রা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন এবং আশাবাদী যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।
Leave a Reply