স্টাফ রিপোর্টার, ০১ সেপ্টেম্বর।
কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের উথলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এছাড়া চেয়ারম্যানের যোগসাজসে ইউপি সদস্যদের বেতন-ভাতা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সচিব মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও একদফা সরকার পতনের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন (গত ৫ আগস্ট) পাটুরিয়া ঘাটে নৌ-পুলিশের গুলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কলেজছাত্র রফিক হত্যা মামলার আসামিও ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন। এর পর থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন।
সূত্রের মতে, ২০২২-২৩ইং ও ২৩-২৪ইং অর্থবছরে ” অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিসি), গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) সাধারণ, গ্রামীণ অবকাঠামো সংষ্কার (কাবিটা) এবং অন্যান্য ৬০ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রায় (১ কোটি ২১ লাখ) টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, উথলী হাসপাতাল হতে শিবালয় উপজেলা গেট পর্যন্ত খাল পরিষ্কারকরণের দেড় লাখ টাকা, বাশাইল খাঁ পাড়া জামেমসজিদ হতে আমির খানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়নের ২ লাখ টাকা, বেলতা রাম কবিরাজের বাড়ি হতে কালুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মানের এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা, শাহিনের মুরগির ফার্ম হতে ইউনুসের বাড়ি ও শশীনাড়া খোরশেদের বাড়ি হতে আনোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত একই অর্থ বছরে একই রাস্তা ২ প্রকল্প দেখিয়ে রাস্তা পুনঃনির্মানের সাড়ে তিন লাখ টাকা, উথলী খেলার মাঠ কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান ঘাট সংলগ্ন ইছামতি নদীর উপর এক পায়ে হাটার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ বাবদ ৮৭ হাজার টাকা, বেলতা একই রাস্তায় উন্নয়ন নামে ৪ প্রকল্প দেখিয়ে ৭ লাখ টাকা ও চন্দ্র প্রতাপ বাশাইল মতিয়ারের বাড়ি হতে শুকুরের বাড়ি পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ তুলে নিলেও প্রকৃতপক্ষে কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ নিয়ে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
উথুলী ইউনিয়নের বেলতা এলাকার বাসিন্দা মোঃ হুমায়ন কবির বলেন, অবশ্যই অনিয়ম করেছেন চেয়ারম্যান। আমরা যখন জানতে পারলাম রাস্তার বাজেট পাশ করে সে নিজেই টাকা ভোগ করে নিয়েছেন তাহলে সেটাতো অনিয়মের মধ্যেই পড়ে। আমরা আমাদের রাস্তা এলাকার সকলের থেকে টাকা তুলে ড্রেজারের মাধ্যমে ভরাট করে হাটা চলা করছি।
মোহাম্মদ আলী বলেন, শুনিছে উনি ইউনিয়নের অনেক রাস্তার কাজ না করেই খেয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কতগুলো রাস্তা বা কত টাকা খেয়েছেন তার সঠিক কোন তথ্য আমার জানা নাই।
রঞ্জিত কবিরাজ বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের রাস্তার বরাদ্দের টাকা মেরে খেয়েছে। উনার বিচার হওয়া উচিত। নিজের টাকায় রাস্তা করেছি আমরা আর চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে বসে বাজেট দিয়ে টাকা আত্নসাত করে ভোগ করছেন। উনার কঠিন বিচার হওয়া উচিত।
শাহনূর শেখ বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের রাস্তার কোন কাজই করেন নাই। শুনেছি রাস্তার বরাদ্দের টাকা খেয়ে ফেলেছেন উনি।
আরেক বাসিন্দা রথীন্দ্র নাথ কবিরাজ বলেন, সরকারি বরাদ্দের টাকায় আমাদের রাস্তা হয়নাই। যতটুকু করেছি আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে।
এছাড়া অন্য আরেক বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চেয়ারম্যান যদি ভুল কাজ না করতো চুরি না করতো তাহলে উনি পালিয়েছেন কেন? উনি জনগণের প্রতিনিধি চেয়ারম্যান, সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্নসাত করেছেন বলেই ইউনিয়ন পরিষদের আসার সাহস পাচ্ছেন না উনি। পালিয়ে বেরাচ্ছেন। উনার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।
অপরদিকে, উথলী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ জাহিদুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান হওয়ার পর আড়াই বছরে উনি প্রকল্পের নামে ২ কোটি টাকার উপরে আত্নসাত করেছেন। উনার চলাফেরা দেখলে মনে হতো উনি এলাকার ডন। চেয়ারম্যান হওয়ার আগে উনার কোনমতে একটা বিল্ডিং ছিলো তাও দেয়ালের ইট বালু খোয়া খুলে পড়তো তখন। আর চেয়ারম্যান হয়েছে আড়াই বছরও হয়নাই এখন উনার বাড়িতে তিনতলা বিল্ডিং, সিসি ক্যামেরা, এসি লাগানো। এগুলোর অর্থ কোথায় থেকে আসলো।
তিনি আরও বলেন, গত আড়াই বছরে আমরা ইউপি সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন বেতন পাইনি। অথচ মাসিক মিটিংয়ের সময় সচিব আমাদের থেকে প্রতারণা করে বেতনের খাতায় সাক্ষর করিয়ে বছর শেষে অডিটে আমাদের বেতন পরিশোধ দেখিয়েছেন। সচিবের কাছে ইউনিয়নের রাজস্বের আয়-ব্যয়ের হিসাব করেকবার চেয়েও পায়নি আমরা। ইউনিয়নের প্রকল্পের টাকা আত্নসাতের পেছনে চেয়ারম্যানের সাথে সচিবও জড়িত।
এদিকে, উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, পরিষদ থেকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বারদের বেতন দিলে গেলে বছরে পরিষদের কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থাকতে হবে। এ ইউনিয়নে যে পরিমাণ রাজস্ব আসে তা দিয়ে পরিষদ চালাতেই হিমশিম খেতে হয় চেয়ারম্যান, মেম্বারদের বেতন দেবো কোথায় থেকে।
এছাড়া প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগে ওই সচিব বলেন, আমার কাজ হলো মেম্বারদের চাহিদানুযায়ী প্রকল্প উপস্থাপন করা এবং সেটি ইউনিয়ন পরিষদে সকলের সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলে চাহিদা রেজুলেশন আকারে উপজেলায় প্রেরণ করা। প্রকল্পের সভাপতি থাকেন চেয়ারম্যান অথবা মেম্বার বাস্তবায়নের দ্বায়িত্বও তাদেরই আর অর্থ বরাদ্দও তাদের নামেই আসে। এখানে আমার নিয়ম বা অনিয়ম করার সুযোগ কোথায় আছে বলেন।
এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজে অনিয়ম বা অর্থ আত্নসাতের বিষয়ে চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগ এখনো পাইনি। এরকম কোন অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। সরকারি টাকা আত্নসাত করে থাকলে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
Leave a Reply