স্টাফ রিপোর্টার, ২৮ জানুয়ারি।
প্রশাসনিক ক্ষমতার বলে আইন-আদালতের নিয়মকানুন তোয়াক্কা না করেই জব্দকৃত ড্রামট্রাক নিলামের অভিযোগ ওঠেছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.ইকবাল হোসেন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের সহযোগীতায় ড্রামট্রাকের মালিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের যোগসাজসে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের একেকটি ড্রামট্রাক মাত্র ২৪ হাজার টাকায় নিলামের বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা অন্য করে গত ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সাটুরিয়া উপজেলার শেখরীনগর এলাকায় রাতের আঁধারে ফসলী জমির মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ অভিযান পরিচালনা করে ১২টি ড্রামট্রাক জব্দ করেন। এসময় ৪টি ড্রামট্রাকের মালিককে ৫০ হাজার টাকা করে ২ লাখ জরিমানা করেন এবং ৪টি ড্রামট্রাক ছেড়ে দেন। পরে বাকি ৮টি ড্রামট্রাক জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন। এরপর ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ড্রামট্রাকের ১৬জন চালক ও হেলপারকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এরপর জব্দ করা ড্রামট্রাক নিলামের সিদ্ধান্ত নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.ইকবাল হোসেন।
নিলাম কমিটি সূত্রে জানা যায়, জব্দকৃত ড্রামট্রাক নিলামের জন্য গত ১২ জানুয়ারি সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইমরান হোসেনকে সভাপতি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.খলিলুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী মো.ইমরুল ইসলামকে সদস্য করে একটি নিলাম কমিটি গঠন করা হয়। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি মাত্র ২৪ হাজার টাকা মূল্যে ৮টি ড্রামট্রাম মাত্র ১ লাখ ৯২ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। নিলামে বিক্রি হওয়ায় একেকটি ড্রামট্রামের মূল্য ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। যার মোট মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।
আইনে বলা আছে, জব্দ করা কোন মাল নিলামের অনুমতির জন্য আদালতে আবেদন করতে হবে এবং আদালতের অনুমতির পর নিলামের জন্য বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অফিসের নোটিশ বোর্ডে নিলাম সংক্রান্ত নোটিশ টানানো হয়ে থাকে। এমনকি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনে মাইকিংও করা হয়ে থাকে। কিন্তু আইন আদালতের নিয়মকানুন তোয়াক্কা না করেই গোপনে নিলামে বিক্রি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত নিলাম কমিটি।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো.ইমরুল ইসলাম জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের পরামর্শে আমরা কেমলমাত্র তার নির্দেশনা পালন করেছি। জব্দকৃত ড্রামট্রাকের বিষয়ে কোন ভ্যালুয়েশন করা হয়নি।এছাড়া নিলাম কমিটিতে নিজেকে স্বাক্ষরকারী হিসেবে দাবী করেছেন তিনি।
তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি ফোন কেটে দেন। একারণে তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.ইকবাল হোসেন ব্যস্ততার অযুহাতে নিলাম কমিটির সদস্যদের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এবং কিভাবে নিলাম হয়েছে,সেটা নিলাম কমিটি ভালো জানেন বলেও তিনি জানান।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক ডক্টর মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, নিলামের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি বিধি মোতাবেক নিলাম করা হলে কোন সমস্যা নেই। তবে নিলামে কোন অনিয়ম হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নিলামে মূল্যে কম বেশি কোন বিষয় নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নামপ্রকাশ্যে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি জানান, ড্রামট্রাকগুলো ছাড়াতে মালিকরা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রশাসনের কাছে তদবির ও দৌড়ঝাপ শুরু করে। এরপর উপজেলা নির্বাহী মহোদয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তারা আলোচনা করে নিলামের সিদ্ধান্ত নেন।একারণে জব্দ করা গাড়ীর মালিকদের সাথে বোঝাপড়া করে গোপনে নিলাম পরিচালনা করা হয়েছে।
Leave a Reply