স্টাফ রিপোর্টার, ২৫ জুন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় কোচিং সেন্টারের ভিতরে মানতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে শ্রীলতাহানির অভিযোগ ওঠেছে মো.বিল্লাল হোসেন নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এরপর প্রতিকার চেয়ে গত ১৩জুন উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পাঁচ স্কুলছাত্রীর বাবা। তবে প্রশাসনের দাবি তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত মো.বিল্লাল হোসেনের বাড়ি সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের মানতা এলাকায়। তিনি মানতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
অভিযোগপত্রে জানা যায়,মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মানতা এলাকায় বাড়ির ভিতরে কোচিং সেন্টারে মানতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ৫জন ছাত্রীকে শ্রীলতাহানি করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো.বিল্লাল হোসেন। এছাড়াও বেশ কিছুদিন যাবত বিদ্যালয় ছুটির পর এবং বিদ্যালয়ের আসার পর বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে আসছেন শিক্ষক মো.বিল্লাল হোসেন। আর এসব বিষয়ে বাবা-মাকে না বলতে ভয়ভীতি দেখানোর পাশপাশি প্রাণনাশের হুমকিও দেন বিল্লাল হোসেন। কিন্তু সম্প্রতি শ্রীলতাহানির বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকরা ছাত্রীদের সাথে কথা বলে শ্রীলতাহানির বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে বিষয়টি জানান। কিন্তু কোথাও এবর প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ওই পাঁচজন শিক্ষার্থীর বাবা।
অভিবাবক মো.শহিদুর রহমান জানান,কোচিং সেন্টারে ও বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকদিন শ্রীলতাহানির পর একদিন বাড়িতে এসে আমাকে সব কিছু বলার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ দেই। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি শিক্ষক বিল্লাল হোসেনের বিচার না করায় বাধ্য হয়ে উপজেলায় অভিযোগ করি। কারন শিক্ষক হয়ে যদি ছাত্রীদের সাথে এমন অসামাজিক কাজ করে, তাহলে আমরা শিক্ষকদের বিশ্বাস করবো কিভাবে।বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তাভাবনা করে, আমরা পাঁচজন অভিভাবক লিখিত অভিযোগ করেছি।
আরেক অভিভাবক জুয়েল মিয়া জানান, শিক্ষক বিল্লাল হোসেন এলাকার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। স্কুলের ছাত্রীদের সাথে অসামাজিক কাজ করার আগেও এলাকায় কয়েকজন নারীর সাথে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল। কিন্তু তার প্রভাবের কারনে কিছুই হয় নাই, স্থানীয়ভাবে বসে সেটি মিমাংসা করা হয়েছিল। আমরা অভিযোগ করার পরও মিমাংসার জন্য আমাদেরকে চাপ দিয়েছে। কিন্তু আমরা মিমাংসা করবো না। আইনে যা হওয়ার তাই হবে। আমরা চাই তদন্ত করে প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থা নিবেন।
স্থানীয় ময়না বেগম বলেন, ছাত্রীদের বাবারা অভিযোগ দেওয়ার পরও স্কুলের শিক্ষকেরা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বিল্লাল মাস্টারকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে। ওই ঘটনার পর এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে যাচ্ছেনা। তাছাড়া যাদের বাবা বিদেশ থাকে, সেই ছাত্রীদের কাছ থেকে তাদের মায়েদের ফোন নাম্বার নিয়ে বিল্লাল হোসেন কথা বলে। বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকে। বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে আমরা চেলে-মেয়েদের আর স্কুলে পাঠাবো না।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো.বিল্লাল হোসেন বলেন,বিদ্যালয়ের দাতা ছিলেন আমার নানি আসমানী বেগম। বিদ্যালয়ের দাতা নিয়ে আমার আমাদের পরিবারের সাথে ঝামেলা চলছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের পুরুষ শিক্ষক হলেন দুজন। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে প্রাইভেট পড়ে। দিন দিন প্রাইভেটে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা আছেন, তারা চাচ্ছেন। আমার নামে একটা ব্লেম দিয়ে বিদ্যালয়ে থেকে আমাকে সরাতে। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসত্য।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন ঢালী জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
Leave a Reply