স্টাফ রিপোর্টার,১৫ মে।
পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার চায়ের দোকানদার মো.নজরুল ইসলামের ছেলে সাকিব খানের। কিন্তু তার পড়ালেখায় বাধা হয়ে দাড়ায় দারিদ্রতা আর অভাব-অনটন। অবশেষে পড়ালেখার খরচ যোগাতে দেয় স্কুল শেষে বাবার চায়ের দোকানে কাজ শুরু করতে শুরু করে সাকিব খান। আর এভাবে পড়ালেখা করেই এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ অর্জন করেছে মেধাবী শিক্ষার্থী সাকিব খান। অধম্য মেধাবী সাকিব খানের পরীক্ষার ফলাফলে খুশিতে আত্মহারা মা-বাবাসহ সহপাঠী ও শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল সাকিব খানের। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা সময় পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। এরপর ভর্তি হয় সাটুরিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে হিমশিমে পরতে হয় চায়ের দোকানদার বাবা মো.নজরুল ইসলামকে। একদিনে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অন্যদিকে ছেলের পড়ালেখার খরচ আর প্রাইভেটের খরচ। দারিদ্রতা আর সংসারের অভাট-অনটনের মধ্যে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সাটুরিয়া বাজারের রুপালী ব্যাংকের নিচের বাবা নজরুল ইসলামের চায়ের দোকানে কাজে যোগ দেয় সাকিব খান। চায়ের দোকানে বাড়তি আয়ের টাকা দিয়ে নিজের পড়ালেখা আর প্রাইভেট চালিয়ে যেতে থাকে সাকিব খান। এরপর সাটুরিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সাকিব খান এবং এবছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মেধার সাথে জিপিএ ৫ অর্জন করে সাকিব খান।
সাকিব খানের বাবা নজরুল ইসলাম জানান,সংসারে অভাট-অনটনের জন্য ছেলেকে ঠিকমতো ভালো জামা-কাপড়, ভালো খাবার দিতে পারি নাই। সংসারের অভাব-অনটন বুঝতে পেরে ছেলে (সাকিব খান) নিজে আগ্রহ করে আমার সাথে চায়ের দোকানে কাজ করেছে। ওর (সাকিব খান) পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে আমরা কষ্টে চললেও সাকিবকে একটু ভালো রাখতে চেয়েছি। অভারের কারনে অনেক সময় বই খাতাসহ অনেক কিছু দিতে পারি নাই। ছেলের পড়ালেখার খবর জানতে পেরে আমাদের ইউএনও স্যার বেশ কয়েকবার আমাকে সাহায্য করেছে। আমার মতো মানুষের ছেলে পরীক্ষায় এতো ভালো রেজাল্ট করেছে, এটা শুনে সবাই খুশি হইছে। আসলে আমার ছেলের জন্য মানুষের দোয়া আর ভালোবাসা ছিল, তা না হলে ওরে পড়ালেখা করাইতে পারতাম না। সাকিবের রেজাল্ট শুনে খুশিতে আমাদের পরিবারের সবাই কান্না করছে। আমরা তো আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। তবে ছেলে পাস করায় কলেজের পড়ালেখা নিয়ে চিন্তাও হচ্ছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো.জসিম উদ্দিন জানান, পড়ালেখার বিষয়ে সাকিব খানের মনবোর ছিল অনেক কঠিন। ক্লাসে পড়ার সময় খুব মনযোগী ছিল সব সময়। সাকিবের মেধার কাছে দারিদ্রতা হার মেনেছে। এবছরের এসএসসি পরীক্ষায় ১২০০ নম্বরের মধ্যে সাকিব খান ১১৮০ নম্বর পেয়েছে। এমন মেধাবী ছিক্ষার্থী খুব কম আছে। তারমতো শিক্ষার্থী আমাদের স্কুলের জন্য গর্বের। তার মেধা ও সাফল্য ধরে রাখতে পারলে দেশ ও জাতি একজন মেধাবী পাবে। আমরা সাকিবের জন্য দোয়া করি,যাতে জীবনে অনেক বড় হতে পারে।
মেধাবী সাকিব খান জানায়, আমরা তো গবীর মানুষ। তাই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বাবার সাথে চায়ের দোকানে কাজ করেছি। আমি পরীক্ষা চেষ্টা করেছি, মানুষের দোয়া আর ভালোবাসায় ভালো রেজাল্ট করেছি। আমার ইচ্ছা আমি পড়ালেখা শেষ করে,বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি ভালো কোন চাকুরি করবো। কারন মানুষ পড়ালেখার বিষয়ে আমাকে সাহায্য করেছে, আমি বড় হয়ে মানুষের সাহায্য করতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে ভালো কিছু উপহার দিতে চাই। তাছাড়া কোন কাজ কে? আমি ছোট করে দেখিনা।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শান্তা রহমান জানান,সাকিব খানের বিষয়ে শোনার পর স্বাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি সাহায্য করার সুযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই তাকে করবো। শুধু সাকিব খান নয়,দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছি। তবে সাকিব খানের পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে অনেক ভালো লাগছে। কারন চায়ের দোকান করে, তার মেধার প্রমাণ দিয়েছে সাকিব খান। সে যনে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে, সেজন্য অবশ্যেই চেষ্টা করবো। তাছাড়া রেজাল্টের খবর শুনে, সাকিব ও তার বাবাকে অফিসে ডেকে, মিষ্টি ও কিছু বই উপহার দিয়েছি।
Leave a Reply