স্টাফ রিপোর্টার, ১৩ জানুয়ারি।
মানিকগঞ্জে লুন্ঠিত উদ্ধার হওয়া স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা ফেরৎ না দিয়ে উল্টো মামলা করতে আসা বাদীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
এর প্রতিকার চেয়ে গত রোববার মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবর মোছাঃ ইয়াছমিন খাতুন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন সিংগাইর পৌরসভার চর-আজিমপুর এলাকার মো.কাজী গোলাম হোসেনের ছেলে ভুক্তভোগীর বড় ভাই কাজী আরিফুর রহমান।
অভিযোগপত্রে জানা যায়,প্রায় ৯ বছর পূর্বে সিংগাইর উপজেলার চর-দূর্গাপুর এলাকার সিদ্দিক খানের মেয়ে চাদনী আক্তারকে বিয়ে করেন একই উপজেলার সিংগাইর পৌরসভার চর-আজিমপুর এলাকার কাজী শরিফুর রহমান এবং তাদের সংসারে ৭ বছরের কাজী আবদুল্লাহ নামের একটি ছেলে সন্তান আছে। দীর্ঘদিন সৌদি আরব কাজ করে চলিত মাসের ১লা জানুয়ারিতে ছুটিতে বাড়িতে আসেন। এরপর গত ৪ জানুয়ারি সকালে কাজী শরিফুর রহমান বাড়ীতে না থাকার সুযোগে বেলা ১০টার দিকে কাজী শরিফুর রহমানের স্ত্রী চাঁদনী আক্তার তার পরিচিত এক যুবকের সাথে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রবাস ফেরত স্বামীর সাথে নিয়ে আসা ৮ভরি স্বর্ণালঙ্কার, স্বামীর ব্যক্তিগত এবং সহকর্মীদের বাড়িতে পাঠানোর ৪৫ হাজার সৌদি রিয়ালসহ ২টি স্মার্টফোন নিয়ে চলে যায়। এরপর দুপুর পর্যন্ত কাজী শরিফুর রহমানের স্ত্রী চাঁদনী আক্তারকে খুঁজে না পেয়ে এবং তার ফোন বন্ধ পেয়ে বিকেল সিংগাইর থানায় অভিযোগ করতে যান প্রবাস ফেরত স্বামী কাজী শরিফুর রহমান। কিন্তু সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর অভিযোগ না নিয়ে উল্টো তার স্ত্রী চাঁদনী আক্তারকে খুন করে লাশ গুম করার অভিযোগ করেন এবং স্বামী কাজী শরিফুর রহমান ও তার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখান। এরপর ওসিকে তার স্ত্রী চাঁদনী আক্তারের মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের অনুরোধ করা হলেও কোন কাজ না হওয়ায় কাজী শরিফুর রহমান বাড়িতে চলে আসেন। এরপর দীর্ঘ ৫দিন অনুরোধের পর কাজী শরিফুর রহমানের স্ত্রীর স্ত্রী চাঁদনী আক্তারের মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিং করে ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর এবং গত ৯ জানুয়ারি রাত দেড়টার সাভারের বিরুলিয়া এলাকার একটি পাঁচতলা ভবন থেকে চাঁদনী আক্তার ও প্রেমিককে উদ্ধার করে সিংগাইর থানা পুলিশ।
অভিযোগকারী কাজী আরিফুর রহমান জানান,এবিষয়ে সিংগাইর থানায় অভিযোগ করতে গেলে মামলা না নিয়ে উল্টো থানায় থাকা পেন্ডিং মামলায় আমাদের পরিবারের সদস্যকে আসামী করে গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখান। এরপর চাদনী আক্তার ও তার প্রেমিককে আটক করে এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার,নগদ বৈদেশিক মুদ্রা আত্মসাতের করে সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। এরপর ১০ জানুয়ারি আমরা মামলা করতে চাইলে মামলা না নিয়ে চাঁদনী আক্তার ও তার কথিত প্রেমিককে থানা থেকে ছেড়ে নেয় ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। একই সাথে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানোও ওসি।
এবিষয়ে সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানান,চাদনী আক্তার নিখোঁজ ও গুমের ব্যাপারে তার বাবা সিদ্দিক খান ৫ জানুয়ারি একটি অভিযোগ দেন।এরপর চাঁদনীর স্বামী তার স্ত্রী টাকা পযসা ও স্বর্নালংকার নিয়ে পালিয়ে গেছে মর্মে অভিযোগ দেন। পুলিশ চাদনীর মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে ৯ জানুয়ারি রাতে তাকে তার প্রেমিকসহ সাভার থেকে উদ্ধার করে। এসময় চাঁদনীর নিটক থেকে চাদনীর কানে এক জোড়া স্বর্নে দুল, নগদ ১৬ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ছাড়া কোনো কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশে থাকার সময় ভরন পোষন না দেওয়ায়,গত ৫ জানুয়ারি চাঁদনী তার স্বামীকে তালাক দিয়ে তার পছন্দের ছেলের সাথে চলে যায়। পরে উর্দ্ধতন কৃর্তপক্ষের সাথে আলোচনা করে চাঁদনীকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে এবং বাদীকে কোনো দুষ্ট চক্র ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন বলেও ওসি দাবী করেন।
তবে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোছাঃ ইয়াছমিন খাতুনের দাবী এধরনের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে অভিযোগের বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে শুনেছি এবং শুনেই তদন্ত করছি। ইতিমধ্যে চাঁদনী ও তার পরিবারের সাথে কথা হয়েছে এবং বাদী (অভিযোগকারী) ও সিংগাইর থানার ওসিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসার জন্য ডাকা হয়েছে।
Leave a Reply