স্টাফ রিপোর্টার, ১৪ জুন।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার দারুল আবরার ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠেছে পরিচালক মো.আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে। এরপর প্রতিকার গত ১১ জুন চেয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর ওয়াদুদ খান। তবে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন প্রশাসন।
অভিযোগপত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের চর-বেউথা এলাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল ওয়াদুদ খান এবং প্রতিষ্ঠার পর তিন বছর পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন আব্দুর ওয়াদুদ খান।এরপর ২০১৫ সালে মৌখিকভাবে আহসান হাবিবকে মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনার জন্য পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। ধীরে ধীরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের জায়গা সম্প্রসারণের জন্য মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক আহসান হাবিবের সাথে আলোচনা করা। পরে ২০১৯ সালে জমি ক্রয়ের জন্য পরিচালকের প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসেব চাওয়া হলে মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠাতার ওয়াদুর খানের সাথে আহসান হাবিবের বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরপর স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও মাদ্রাসার অভিভাবকরা একাধিবার চেস্টা করেও পরিচালক আহসান হাবিবের কাছ থেকে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের হিসেব আদায় করতে পারেন নি। পরে স্থানীয় জনিপ্রতিনিধি ও সচেতন ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের পড়লেখার কথা চিন্তা করে একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে মাদ্রাসায় ৩ শতাধিক শিক্ষারর্থী পড়লেখা করেন। প্রত্যেককে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পড়ালেখা ও খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বাবদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা আদায় করছেন মাদ্রাসা পরিচালক। এরপর মধ্যে প্রায় ৫০জন শিক্ষার্থী অর্ধেক বা বিনা বেতনে পড়ালেখা করে আসছে।
স্থানীয় মো.শাহিনুর ও হারুন অর রশিদ জানান, আব্দুর ওয়াদুদ নিজের জমির ওপরে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই সময় ১৮ মাস মাদ্রাসার শিক্ষদের নিজ অর্থায়নের বেতন দিয়েছেন তিনিসহ তার এক বন্ধু। আমরা দেখেছি, মাদ্রাসাটিকে কত কষ্ঠ করে পরিচালনা করেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিচালক আহসান হাবীব মাদ্রাসার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ভালো ভাবেই সব চলছিল। তার কাছে মাদ্রাসার ফান্ডের টাকার হিসাব চাওয়ার পর থেকেই ওয়াদুদ সাহেবের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। মাদ্রাসার পরিচালক আহসান হাবীব একজন ঈমাম এবং শুনেছি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ঈমাম হয়ে এতো টাকা কোথায় পেলেন যে, এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে জয়নগ এলাকায় আরেকটি মাদ্রাসার নামের জয়াগা কিনেন। এ ছাড়াও মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বেরসকারি হাসপাতালে একাদিক শেয়ার (মালিকানা) আছে, পৌরসুপার মার্কেটে দোকানও কিনেছেন তিনি।
স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাদ্রাসা পরিচালানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ নাহিদ জানান,মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর ওয়াদুদ ও পরিচালক আহসান হাবীদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। মাদ্রসার জমিজমা ও অনুদানের টাকা পয়সা নিয়েই একে ওপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছেন। তবে তাদের দুজনের মধ্যেকার বিরোধ নিয়ে একাধিকবার সমঝোতার জন্য বসা হলেও কোন সুরাহা হয়নি। মাদ্রাসার অনুদানের টাকা হিসাব আমাদের দেওয়া হয়নি এবং আমরা দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময় মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব শূন্য ছিল। এ কারনে পরিচালক মাদ্রাসার কোন টাকা পয়সা অন্যত্র সরিয়েছেন কি না তা সঠিক বলতে পারছি না। পরিচালনা কমিটি কোন রশিদের মাধ্যেমে আমাদের হিসাব বুঝিয়েদেন নাই, মৌখিকভাবে হিসাব দিয়েছেন।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর ওয়াদুদ খান জানান,‘আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের জমিতে উপার্জিত কষ্টের টাকায় মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠতা করেছি। প্রতিষ্ঠার তিন বছর পরে (২০১৫সালে) মৌখিকভাবে আহসান হাবীব হুজুরকে পরিচালনার দায়িত্ব দেই। তিনি এই সুযোগে মাদ্রাসার নামের আসার অনুদানের টাকা যৌথ ব্যাংক হিসাবে (ইসলামী ব্যাংক মানিকগঞ্জ শাখা) না রেখে নিজের ব্যাংক হিসাবে রাখেন। এর পর মাদ্রাসার জায়গা সম্প্রসারণের জন্য ২০১৯ সালে তার কাছে টাকা চাই এবং দীর্ঘ ৫ বছরের সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসাবও চাওয়া হয়। তবে এক মাসের সময় নিয়েও আজ পর্যন্ত তিনি কোন হিসাব দেননি।
তিনি আরো জানান,হিসাব চাওয়ায় পরিচালক আহসান হাবীব আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এ ছাড়া তিনি আগের সকল শিক্ষক ও স্টাফদের ছাটাই করে তার অনুগত শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগ দিয়েছেন। যাতে করে তার এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে না পারে। মাদ্রাসার ছাত্রদের ভবিষ্যত ও প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতির জন্য পরিচালকের নিকট থেকে হিসাব গ্রহণ এবং পরিচালককে প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওয়াদুদ খান।
তবে মাদ্রাসার পরিচালক আহসান হাবির জানান,আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা মিথ্যা ও বানোয়াট। এরপর ব্যস্ততার অযুহাতে ফোন কেটে দেন আহসান হাবিব।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার জানান,অভিযোগ পেয়েছি,তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply