লেখকঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু স্যার।।
গত বুধবার, মানিকগঞ্জে ‘বনফুল’র স্যাণ্ডউইচ খেয়ে ৩০ প্রাইমারি শিক্ষকসহ কমপক্ষে ৪০ জনের মত গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন। অসুস্থদের মধ্যে প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণের আয়োজক অফিসের কর্মকর্তাও আছেন। ঘটনার তিন, চারদিন পরও অধিকাংশ শিক্ষক এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন, নয়তো হাসপাতালে কদিন থেকে বাড়িতে এসে চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন।
বিপদগ্রস্থ এসব শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের শেষ দিন, শেষ সেশনে যে নাস্তা দেয়া হয়েছিল সে নাস্তার প্যাকেটের একটি আইটেম ছিল বনফুল কোম্পানির স্যাণ্ডউইচ।
প্রশ্ন উঠতে পারে স্যাণ্ডউইচের কারণেই যে এ বিষক্রিয়া সেটা নিশ্চিত হওয়া গেল কেমন করে। উত্তরটা সহজ। প্রশিক্ষণ যাঁরা নিয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই নারী। এঁদের মধ্যে বেশ কজন নাস্তার অন্য আইটেমগুলো খেলেও স্যাণ্ডউইচটা বাসায় থাকা ছেলে, মেয়েদের জন্য নিয়ে যান। বাসায় নিয়ে যাওয়া সে স্যাণ্ডউইচ খেয়ে একাধিক শিক্ষকের ছেলে, মেয়েও একই ধরণের অসুস্থতায় পরেছে। প্রচণ্ড পেট ব্যথা, লুজমোশন, বমি, জ্বর হয়েছে সবারই।
বাইরে থেকে যারা খবরটি শুনেছেন তাদের সাথে আমারও প্রাথমিক ধারণা ছিল, স্যাণ্ডউইচগুলো হয়তো পঁচা বা বাসি ছিল। কিন্তু সেটা না। যাঁরা খেয়েছেন তাঁরা কেউই খাবার সময় পঁচা, বাসি খাবারের কোনধরনের গন্ধ বা অন্যরকম কোন স্বাদ টের পাননি। স্বাভাবিক ভাবেই খেয়েছেন।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা এই স্যাণ্ডউইচ বানানোর সময় কারখানা থেকে মানবদেহের জন্য ভয়ংকর, প্রাণঘাতি কোন কেমিকেল অথবা স্যাণ্ডউইচ বানানোর জন্য যে যে উপাদান ব্যবহার করা হয়, তার কোন একটির মধ্যে ক্ষতিকর কোন উপাদান মিশে ছিল।
ভাগ্যভাল, কেমিকেল বা ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা হয়তো কম ছিল। ফলে বিষয়টা মৃত্যু পর্যন্ত যায়নি। কিন্তু সবাইকে প্রচণ্ডরকম অসুস্থ করে ফেলেছে। যা সাধারণ ফুডপয়জনিংয়ে হয় না।
বনফুলের এই স্যাণ্ডউইচ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাজারে থাকা ফাস্টফুডের খাবারগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাবার যে কোনসময় প্রাণঘাতি হয়ে উঠতে পারে।
বনফুল সাধারণ বা নতুন কোন প্রতিষ্ঠান নয়, একটি সুপরিচিত বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। এরাই যদি খাবারের কোয়ালিটি কন্ট্রোল না করে তাহলে সাধারণ বা অন্য খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর ভরসা রাখবো কী করে।
বিষয়টিকে হালকাভাবে নেবার কোনও সুযোগ নেই। এই ঘটনা সাধারণ তদন্ত বা মোবাইল কোর্টের জরিমানাতেই যেন শেষ না হয়।
ঘটনাটিকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে সিরিয়াসলি তদন্ত করা জরুরী, নইলে ক্ষমতাবানেরাও যে কোন দিন এমন পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন, তা যে ব্রাণ্ডের, যত অভিজাত ফাস্টফুডশপ থেকেই কিনে খান না কেন।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমার পরিচিত একজন ফাস্টফুড ব্যবসায়ী কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন, লার্জস্কেলে প্রডাকশনে থাকা কারখানার ওভেনক্লিনার হিসেবে যে কেমিকেল ব্যবহার করা হয় তা প্রচণ্ডরকমের বিষাক্ত কেমিকেল। এই কেমিকেল দিয়ে কারখানার ওভেনগুলো মেজর ক্লিনের কাজ শেষ করার পরও আরও কয়েক ধাপের পরিচর্যার পর ওভেনগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়। এসব ধাপের একটিতেও অবহেলা বা ছাড় দেবার সুযোগ নেই। দিলেই বিষক্রিয়ার মত বিপদ ঘটতে পারে।
দ্রষ্টব্য: ছবিগুলো আজ সকালে তোলা। দোকানটি যথারীতি খোলাই আছে। অসুস্থরা পাতি নেতা কিংবা মিডিয়াম সাইজের হ্যাডমওয়ালা কেউ হলে হয়তো ভিন্নচিত্র হত।
সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু স্যারের ফেইসবুক থেকে নেওয়া।
Leave a Reply